অধ্যবসায় রচনা | Ordhoboshai Rochona For SSC HSC & JSC

 

অধ্যবসায় রচনা | Ordhoboshai Rochona For SSC HSC & JSC

 

অধ্যবসায় রচনা পয়েন্ট সমূহঃ সূচনা, অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য, অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা, ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব, ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব, জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব, অর্থনীতি ও অধ্যবসায় , প্রতিভা ও অধ্যবসায়, অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত, অধ্যবসায়ের উদাহরণ, অধ্যবসায় এর পরিচর্চা না করার পরিণাম, অধ্যবসায়ের শিক্ষা, উপসংহার

সূচনাঃ

‘অধ্যবসায়’ শব্দের অর্থ হলো চেষ্টা বা সাধনা। কোনো কাজে ব্যর্থতা ও অবসাদের গ্লানি মুছে ফেলে। বার বার চেষ্টা , প্রচেষ্টা বা কঠোর সাধনার মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর নাম অধ্যবসায়। সাধনা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা অধ্যবসায়ের উপাদান। কোনো কাজে প্রথম চেষ্টায় সফলতা লাভ করা কঠিন ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে নিরাশ হয়ে পড়লে জয়মাল্য মিলবে না। বিজয়ীর বেশ ধারণ করার জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়, সংগ্রাম ও উদ্যোগ। অধ্যবসায়ী হতে না পারলে জীবনে পরম আকাঙ্খিত বস্তুটি মরীচিকার মতোই থেকে যায়। জীবনে সফলতা লাভ করতে হলে চাই অধ্যবসায়।

 

অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যঃ

অবিরাম সাধনা, ক্রমাগত চেষ্টা আর সুদৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্যেই অধ্যবসায়ের পরিচয়। অধ্যসায় মানব চরিত্রের একটি গুণ- অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উদ্যোগ, পরিশ্রম, আন্তরিকতা ইত্যাদি কতিপয় মহৎ গুণ সম্পৃক্ত হয়েই অধ্যবসায়ের পরিচয় স্পষ্ট করে তোলে। মানবজীবনের সামনে আছে অনেক কাজ। সেখানে মনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে, উৎসাহে উজ্জীবিত হয়ে, নিরলস সাধনার মাধ্যমে সফলতার অভিষ্ট লক্ষ্য অরজনে আত্মনিয়োগ করলেই অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। বাঁধা ডিঙিয়ে যাবার সাধনাই অধ্যবসায়, লক্ষ্যে পৌছার সাধনাই অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ই মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে মানুষকএ আশাবাদী করে তোলে। কবি বলেছেন-

‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর
একবার না পারিলে দেখ শতবার।’

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তাঃ
আল্লাহ বলেছেন,” আল্লাহ সে জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যে জাতি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে না। ”হাদিসে বলা আছে, ”যে চেষ্টা করে সেই পায়” .এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, মানবজীবনে অধ্যবসায়ের বিকল্প কিছু নেই। এমনভাবে প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলা আছে। কারণ অধ্যাবসায় ছাড়া মানুষ সফলতার দিকে যেতে পারে না। সফলতার প্রথম ধাপ এবং শেষ ধাপ হচ্ছে এই অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের ফলে মানুষ যুগে যুগে জয় করেছে বিভিন্ন অজয় কে। যেমন মহাসাগর এর অতলগর্ভ, পর্বত শৃঙ্গ। আর বর্তমানে মহাকাশেও মানুষের পদচারণা। সুতরাং মানব জীবন, জাতীয় জীবন সকল ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।

মনে রাখতে হবে , Failure is the pillar of success. ব্যর্থতাই সফলতার স্তম্ভ। ব্যর্থতা থেকেই নতুন গন্ত্যেব্যের শুরু, আর সফলতার মাধ্যমে সে গন্ত্যেব্য সমাপ্ত হয়। অধ্যবসায়ী ব্যক্তির কাছে ব্যর্থতা বলে কোনো শব্দ নেই। অধ্যবসায় দ্বারা মানুষ অসাধ্যকে সাধন করে। আত্মপ্রতিষ্ঠার সর্বোকৃষ্ট পন্থা অধ্যবসায়। জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, নৈপুণ্যে, দক্ষতায়, শিল্পে, সাহিত্যে, সঙ্গীতে , আবিষ্কারে, উদ্ভাবনে পৃথিবীর এই উন্নতি ও সাফল্যের মূলে রয়েছে অনেক বছরের নিরলস অধ্যবসায়।

 

ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ

মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি ব্যক্তিই নিজের ভেতর কোনো না কোনো প্রতিভা নিয়েই পৃথিবীতে আসে। যারা মনে করে তাদের কোনো প্রতিভা নেই, আদপে তারা অধ্যাবসায়হীনতার কারণে নিজেদের সেই সুপ্ত প্রতিভাকে খুঁজে বার করতে ব্যর্থ হয়েছে।

কেউ যদি নিজেকে প্রতিভাহীন মনে করে হাল ছেড়ে দেয়, তাহলে হতাশার গ্লানি তাকে আচ্ছন্ন করে। স্বাভাবিকভাবেই আসে ব্যর্থতা। প্রকৃতপক্ষে জীবনে প্রতিভার থেকেও যে গুণটির গুরুত্ব সর্বাপেক্ষা বেশি, তা হলো অধ্যাবসায়। বিশ্ববরেণ্য বৈজ্ঞানিক স্যার আইজ্যাক নিউটনও তার জীবনে প্রতিভার থেকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন অধ্যাবসায়কে।

তার মতে শুধুমাত্র পরিশ্রম, ধৈর্য এবং অভ্যাসের মাধ্যমেই সাফল্যের শিখরে আহরণ করা যায়। তার জন্য আলাদা করে বিশেষ কোনো প্রতিভার দরকার হয় না। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার মনে করতেন, প্রতিভা বলে প্রকৃতপক্ষে কোন কিছুই নেই; যা আছে তা হল ধৈর্যশীল অধ্যাবসায়ের অঙ্গীকা।

 

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ

ছাত্রজীবন হচ্ছে মোক্ষম সময় জীবনে ভালো গুণগুলো অর্জন করার জন্য। এ সময়ে আপনার পারিবারিক চিন্তা, ক্যারিয়ার চিন্তা, অর্থনৈতিক চিন্তা, রাজনৈতিক চিন্তা ইত্যাদি খুব কম থাকে। তাই এ সময়ে যত বেশি পারা যায় ভালো গুণ অর্জন করা উচিত। এজন্য ছাত্রজীবনকে বলা হয় বীজ বপনের সময়। অর্থাৎ জীবনকে গঠন করার জন্য ছাত্রজীবন শ্রেষ্ঠ এবং উপযুক্ত সময়। তাহলে কেন আমরা ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের মত গুরুত্বপূর্ণ গুণ অর্জন করব না ? অলস এবং পরিশ্রমী নয় এমন ছাত্রছাত্রী যত মেধাবী হোক না কেন সে সফলতা লাভ করতে পারে না। যেমন অনেক ক্ষেত্রে আমরা বলি তার মেধা আছে কিন্তু পড়ালেখা করে না। পড়ালেখা না করার কারণ হচ্ছে তার অধ্যবসায় নেই।

অন্যদিকে একজন ছাত্র -ছাত্রী স্বল্প মেধা সম্পন্ন হলেও তার চেষ্টার মাধ্যমে ভালো কিছু করতে পারে। যেমন একজন মেধাবী ছাত্রের একটি পড়া মুখস্থ হতে দুইবার পড়া লাগে। আর একজন স্বল্প মেধাবীর সেই বাক্যটি মুখস্থ হতে পাঁচবার করা লাগতে পারে। কিন্তু সে পারবে। হয়তো তার কিছুটা বেশি সময় লাগছে। এজন্য সে থেমে থাকবে না। তাই যে চেষ্টা করবে সে সফলতা পাবে। একবার অকৃতকার্য হলে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া বোকামী লক্ষণ। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় নামক মহৎ গুণ অর্জন করে নিজেকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিতে হবে। ছাত্র জীবন শেষ হলে যতই চেষ্টা করুন আপনি অধ্যবসায় চর্চা করতে পারবেন না। তখন অল্পেই ভেঙে পড়বেন। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় নামক সোনার হরিণ কে নিজের জীবনের সাথে একাগ্র করে ফেলুন।

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন,

‘কোন কাজ ধরে যে উত্তম সেই জন

হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।’

 

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ

ইতিমধ্যে আমরা বুঝতে পারলাম সকল ক্ষেত্রে অধ্যবসায় প্রয়োজনীয়। যখন কেউ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে থাকে, তখন সে যদি অধ্যবসায়ী না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হতে পারে। যেমন একটি প্রজেক্ট করার সময় বিভিন্ন বাধা আসতে পারে। কিন্তু সেই বাঁধাগুলো পেরিয়ে তাকে প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু সে যদি অধ্যবসায়ী না হয়, তাহলে পারবে না। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

কোনাে একটি দেশের সকল নাগরিক যখন ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ী হয়ে উঠবে, তখন ঐ জাতির উন্নতি সম্ভব। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেসব দেশের নাগরিক গণ অধ্যবসায়ী। সেসব দেশগুলাের উন্নতির মূলমন্ত্র অধ্যবসায়। কেবলমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই এসব দেশ মানচিত্রে উন্নতির শীর্ষে।

 

অর্থনীতি ও অধ্যবসায়ঃ

একটি দেশের অর্থনীতি নির্ভির করে সে দেশের মানুষ কতটা পরিশ্রমী। একটি দেশের অর্থনীতির কাঠামো নির্মাণ হয় ওই দেশের মানুষ দ্বারা। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অনুন্নত দেশের মানুষ  উন্নত দেশের মানুষের  চেয়ে কম পরিশ্রমী। উন্নত বিশ্বে যা কিছু অর্জিত হয়েছে তার পিছনে অধ্যবসায় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। দেশের অর্থনীতি যদি শক্তিশালী না হয় তবে সে দেশে দেখা দেয় নানা সমস্যা। অর্থের অভাবে সে দেশে উন্নয়ন হয় মন্থর। কাজেই অধ্যবসায় একটি দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করতে।

প্রতিভা ও অধ্যবসায়ঃ

অনেকেই ভেবে থাকেন, প্রতিভাই সফলতার মূল নিয়ামক। এ ধারণা পুরােপুরি গ্রহণযােগ্য নয়। অধ্যবসায় ছাড়া সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় না। প্রতিভাবানদের জীবনেও আত্মপ্রতিষ্ঠা আসে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। একজন মানুষের সফল বা ব্যর্থ হওয়া তার ক্ষমতার ওপর যতটা না নির্ভর করে, তারচেয়ে বেশি তার দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর নির্ভর করে। যারা সফল হয়, তারা সফল হওয়ার আগে থেকেই সফল মানুষের মত আচরণ করে। এই বিশ্বাসই একদিন সত্যিতে পরিনত হয়।

 

অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্তঃ

বিশ্বের বুকে যারা মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালােবাসার আদর্শ হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। আমাদের প্রিয় নবী হযরত  মুহাম্মদ (সঃ) বহু কষ্ট আর রক্ত জড়িয়ে বিশ্বের বুকে ইসলামকে  জয়ী ও প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। মহাকবি ফেরদৌসীর অমর মহাকাব্য ‘শাহনামা’ দীর্ঘ তিরিশ বছরের কাব্যপ্রয়াস। জ্ঞানেন্দ্রমােহন দাশ বিশ বছরের সাধনায় রচনা করেন বাংলা ভাষার অভিধান। কোনাে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ছাড়াই একক প্রচেষ্টায় প্রায় দু হাজার প্রাচীন পুথি সংগ্রহ করেন খ্যাতনামা সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস পরপর ছয়বার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েও হাল ছাড়েননি। শেষপর্যন্ত তিনি জয়ী হয়েছিলেন। বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী নিউটনের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ সাধনা ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম। অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন যারা তারা ছিলেন অধ্যবসায়ী।

অধ্যবসায়ের উদাহরণঃ

জগতে যারা বড় শিল্পী সাহিত্যিক বৈজ্ঞানিক রয়েছে তারা সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী। কারণ একটি তথ্য প্রমাণ করতে যথেষ্ট অধ্যবসায় প্রয়োজন। মহাকবি ফেরদৌসী প্রায় 30 বছর ধরে মহাকাব্য শাহনামা রচনা করেছিলেন। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ নিজের চেষ্টায়, দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে সংগ্রহ করেছেন প্রায় 2000 প্রাচীন পুথি। অথচ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। আমরা প্রতিনিয়ত যে উদাহরণ পড়ি তা হচ্ছে মাকড়সার কাহিনী। কটি মাকড়সা ছয়বার কড়িকাঠে সুতা বাঁধবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর সপ্তমবারে  সফল হয়।

এভাবে জগতে যারা ভালো কাজ করেছেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন অধ্যাবসয়ী।  অধ্যাবসায় ছাড়া সফলতা লাভ করা সম্ভব নয়। হ্যাঁ শুধু অধ্যবসায় হলেই হবেনা। স্রষ্টার রহমতে প্রয়োজন হবে। সুতরাং স্রষ্টার রহমত ও অধ্যবসায় থাকলে অজয় কে জয় করা সম্ভব। পৃথিবীতে যত মনীষী দেখবেন তারা সকলেই ছিলেন অধ্যাবসয়ী। পৃথিবীতে যে যত বেশি অধ্যবসায় করতে পারবে, সে তত উচ্চশিখরে যেতে পারবে। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন যে পরীক্ষায় 90 পেয়েছে, সে যে ৮০ পেয়েছে তার থেকে বেশি পড়ালেখা করেছে। সুতরাং অধ্যবসায় এর বিকল্প নেই। চারিদিকে যত সফলতা দেখবেন বুঝতে হবে এর পেছনে লুকিয়ে আছে অধ্যবসায়।

 

অধ্যবসায় এর পরিচর্চা না করার পরিণামঃ

বর্তমান সমাজে তরুণদের মাঝে অধ্যাবসায় নেই। এর কারনে আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই সুইসাইড নামক ভয়ানক ব্যাধি। দুঃখ হলেও সত্য যে এই ভয়ানক ব্যাধি দিনে দিনে বাড়ছে। তার মানে হচ্ছে দিনে দিনে অধ্যবসায় কমে যাচ্ছে। একটি পরীক্ষায় খারাপ করা মানেই সুইসাইড নয়। অথচ তার ভবিষ্যৎ আরো ভালো হতে পারতো। যদি সে অধ্যাবসায় করতে পারতো। আমাদের এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদেরকে এর প্রতিকার করতে হবে। অধ্যবসায় না থাকার কারণে শুধু একটি জীবন নয়, একটি দেশ বা রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যে দেশে অধ্যবসায় নাগরিক পাওয়া যায়না সে দেশ দুর্নীতির সেখানে শিখরে চলে যায়। অধ্যবসায় এর কোন বিকল্প নেই।

 

অধ্যবসায়ের শিক্ষাঃ

 

মরা যদি বিশ্বজুড়ে উন্নত দেশ এবং সফল ব্যক্তিদের লক্ষ্য করি তবে দেখবো ব্যক্তিদের মধ্যে একটি ধারাবাহিক প্রবণতা রয়েছে এবং সেই ধারাটি হল অধ্যবসায়ের ক্ষমতা। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন –

“The greatest glory in living lies not in never falling, but in rising every time you fall.”
 
আর এটাই হলো অধ্যবসায়ের মূল শিক্ষা। জীবনে ব্যর্থতা যে থাকবে না এমন টা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ জীবন থেমে থাকে না। জীবন বহমান নদীর মতো। তাই জীবনে ব্যর্থতা দেখে পিছু পা হলে সাফল্য লাভ করা যাবে না। বিশ্বখ্যাত লেখক ও ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েন বলেছেন –
“জীবনে সফল হতে চাইলে দু’টি জিনিস প্রয়োজন: জেদ আর আত্মবিশ্বাস”
অধ্যবসায়ের মূল শিক্ষা হলো বার বার ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর সাফল্যের স্বপ্ন দেখা। আমাদের মনে রাখতে হবে খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসবেই। আর সেই ভালো সময়টিক কাজে লাগানোর জন্যে দরকার অধ্যবসায়ের।

উপসংহারঃ

অধ্যবসায়ী ব্যক্তির জীবনের মূলমন্ত্র হল- ব্যর্থতাই সাফল্যের সোপান। নিজের অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের এবং জাতির সামগ্রিক উন্নতিসাধন সম্ভব- একথা প্রমাণিত সত্য। “মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন”- অধ্যবসায় সম্পর্কে এটি একটি চরম সত্য প্রবাদ। যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ী নয়, সে জীবনের সাধারণ কোন কাজেও সফলতা পায়না।

জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা এই অধ্যবসায়ের উপরেই নির্ভর করে, তাই প্রতিটি মানুষেরই উচিৎ অধ্যবসায়ের মত মহৎ গুণটিকে আয়ত্ত্ব করা। অধ্যবসায় আমাদের জীবনে পরশপাথরের মতো কাজ করতে পারে। যদি আমরা তাকে আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি, তবে তার ছোঁয়ায় আমাদের যেকোন কাজেই স্বর্ণসফলতা আসতে বাধ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *